স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্স বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম ও স্বনামধন্য ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে স্কয়ারের (Square) পন্য বা পরিষেবাগুলো ব্যবহার করেনি এমন লোক পাওয়া প্রায় অসম্ভব। স্কয়ার কোম্পানিকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলির মধ্যে বিবেচনা করা হয়। কোম্পানিটি দেশের বাইরেও নিজস্ব নাম প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে একটি বহুজাতিক কোম্পানি হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে।বর্তমানে কোম্পানিটি বিশ্বের ৪২ টি দেশে ঔষধ রপ্তানি করছে।
প্রতিষ্ঠাতার নাম ও পরিচয় : স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন ফরিদপুর জেলার আরুয়াকান্দিতে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম ইয়াকুব হোসাইন চৌধুরী ও মাতার নাম লতিকা চৌধুরী। তার স্ত্রীর নাম অনিতা চৌধুরী। তার তিন ছেলে - তপন চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী ও স্যামুয়েল চৌধুরী। তিনি ১৯৩০-৪০ সাল পর্যন্ত (কলকাতার) বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকেই তিনি সিনিয়র কেমব্রিজ ডিগ্রী অর্জন করে থাকেন। এরপরই তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় এবং সেখান থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর বাবা আউটডোর ডিসপেনসারির মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই তিনি ঔষুধ নিয়ে গবেষনা করতেন। ৫ জানুয়ারি ২০১২ সালে তিনি মারা যান।
স্যামসন এইচ চৌধুরী |
প্রতিষ্ঠাকাল ও এতো বড় কোম্পানি হয়ে উঠা : স্যামসন এইচ চৌধুরী এবং তার তিন বন্ধুরা মিলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে মাএ ২০ হাজার টাকা মূলধন ও মাএ ১২ জন শ্রমিক নিয়ে পাবনার আতাইকুলায় স্থানে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। বর্তমানে (২০১৮-১৯) অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী স্কয়ারের বার্ষিক লেনদেনের পরিমান ১১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড এ পরিণত করা হয়। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয় এবং সে বছরই নতুন করে নামকরন করা হয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর প্রথম ওষুধ ছিলো রক্ত পরিশোধনের সিরাপ, নাম ‘Astron Syrup’ ।
তথ্যসূথ: ysseglobal
অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান :
· স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস
· স্কয়ার টয়লেট্রিজ
· স্কয়ার হেস্ককন
· ফার্মা প্যাকেজেস
· স্কয়ার ফ্যাশন ইয়ার্ন
· স্কয়ার সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট
· স্কয়ার টেক্সটাইলস
· স্কয়ার ফ্যাশনস
· স্কয়ার ইয়ার্ন
· স্কয়ার হসপিটাল
· স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ
· মিডিয়াকম
· স্কয়ার এয়ার
· স্কয়ার ইনফরমেটিকস
· এজেস সার্ভিস
· মাছরাঙা কমিউনিকেশনস,
· স্কয়ার অ্যাগ্রো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড
প্রসেসিং
· সাবাজপুর টি কোম্পানি
· স্কয়ার ডেনিম এবং
· স্কয়ার অ্যাপারেলস।
স্কয়ার কোম্পানির এই অধীনস্ত কোম্পানিগুলোতে ( ২০১৯ অর্থবছর ) হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫৫৬০৩ জন শ্রমিক কাজ করে।
বর্তমানে স্কয়ার
গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বে রয়েছেন স্যামসন এইচ চৌধুরীর বড় ছেলে স্যামুয়েল এস
চৌধুরী ওরফে স্বপন চৌধুরী। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল ও স্কয়ার
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তপন চৌধুরী (মেজো ছেলে)। ছোট ছেলে অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু মাছরাঙা টেলিভিশন, স্কয়ার টয়লেট্রিজ ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্যামসন এইচ চৌধুরীর একমাত্র কন্যা রত্না পাত্র স্কয়ার গ্রুপের
ভাইস চেয়ারম্যান। আর স্কয়ার গ্রুপের নেপথ্যের প্রেরণাদাতা ও ব্যবসায়িক
ক্ষেত্রে পারিবারিক যেকোনও বিষয়ের মতভেদ বা যেকোনও জটিল পরিস্থিতির সমাধানে নেপথ্যে
কাজ করেন তাদের মা অনিতা চৌধুরী।
তথ্যসূএ: বাংলা ট্রিবিউন
নীট আয় : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানিটির চলতি ২০২১-২২ বছরের হিসাব অনুযায়ী মোট সমন্বিত আয় বিগত বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর-পরবর্তী নিট মুনাফাও বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ শতাংশ। অনুষ্ঠিত এক সভায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে কোম্পানির পরিচালক সমিতি। প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরে মোট সমন্বিত আয় ১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। যা বিগত বছরে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেরেছে ২৬৯ কোটি টাকা।
চলতি বছরের হিসাব অনুযায়ী কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ৪৫৭ কোটি টাকা। যা বিগত বছরে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়ছিলো ৩৭৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা বেড়েছে ৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী মনে করেন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকল্পনিয় ভালোবাসা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি দেশের জনগনের আস্থা কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহস জোগাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘ আমাদের স্বপ্ন স্কয়ার বহুজাতিক কোম্পানি হবে। যা বিশ্বের মানুষ এটিকে বাংলাদেশি কোম্পানি নামে চিনবে’।
file photo |
0 Comments