গ্রামে করার মতো লাভজনক ১০টি ব্যবসার আইডিয়া

বাংলাদেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করেআর এত বিশাল জনগোষ্ঠির বেশিরভাগ লোক কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীলতবে তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা করার জন্য আগ্রহী। কিন্তু তাদের মনের মাঝে একটি প্রশ্ন জাগে গ্রামে কি ব্যবসা শুরু করা যায়তাই তারা কি ব্যবসা করবে তার সঠিক আইডিয়া খুঁজে পায় নাআবার সবজায়গায় সব ব্যবসাও করা যায় না। তার জন্য সঠিক স্থান এবং সঠিক পন্য নির্বাচন করাটা জরুরি। শহরের ব্যবসার চাইতে গ্রামে ব্যবসা করাটা সহজকারন প্রতিযোগিতা কম।

তাই আজকে আমরা এমন কিছু ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে কথা বলবো যা আপনাকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে এবং অল্প পরিমান মুলধন নিয়ে এসব ব্যবসা শুরু করা যায় তাহলে চলুন শুরু করা যাক-


. হাঁস-মুরগির খামার :

গ্রাম অঞ্চলে অনেক খালি যায়গা রয়েছে যেখানে উদ্যোক্তাগন হাঁস-মুরগির খামার দিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলছে আপনিও পারেন হাঁস-মুরগির খামার দিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে বর্তমানে হাঁস-মুরগির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কারণ এর মাংশ প্রোটিনের যোগান দেয় এবং এটি লালন-পালনও খুব সহজ আপনি যদি এই ব্যবসা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এসব কিছু মাথায় রাখতে হবে যেমনঃ খামারটি এমন যায়গায় স্থাপন হওয়া চাই যাতে খামারটি শহরের বেশি দূরে না হয় এবং যেখানে ব্যবসার জন্য উপযুক্ত সকল সুবিধা পাওয়া যায় হাঁস-মুরগির উপযুক্ত বাচ্চা নির্বাচন করতে হবে সাস্থ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে এছাড়াও প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে যথা ফিডার, বাসা, খাঁচা বাক্স ইত্যাদি


. ফলের ব্যবসা :

বর্তমানে বেশ লাভজনক ব্যবসার মধ্যে ফলের ব্যবসা অন্যতম বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য মানুষ ফলমূল খেয়ে থাকে তাই এর ব্যাপক চাহিদা চাকরির পিছনে না ছুটে ফলের ব্যবসা করে আপনি বেশ ভালো পরিমানে আয় করতে পারেন গ্রাম থেকে কম দামে কিনে শহরে বেশি দামে বিক্রি করে বেশ ভালো আয় করা যায় তবে এই ব্যবসা করতে স্থান নির্বাচন করাটা জরুরি আপনি যেখানে-সেখানে এই ব্যবসা করতে পারবেন না ফলের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে বাস টার্মিনাল, এয়ারপোর্ট, বাজার, লঞ্চ ফেরি টার্মিনাল ইত্যাদি এসব স্থানে প্রচুর ক্রেতা পাওয়া যায়


. সার কীটনাশকের ব্যবসা :

শহরের চাইতে অধিকাংশ লোক গ্রামে বসবাস করে আর তাদের মূল জীবিকা হলো চাষাবাদ তাই গ্রাম অঞ্চলে সার কীটনাশকের চাহিদা বেশি আপনি চাইলে সার কীটনাশকের ব্যবসা করতে পারেন এটি আপনার জন্য লাভবান হতে পারে ব্যবসা দেওয়ার পূর্বে আপনাকে ব্যবসার সঠিক জায়গা নির্বাচন করে কৃষি বিভাগ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে এছাড়াও ব্যবসা করতে হলে সার কীটনাশক সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে আপনার যদি পর্যাপ্ত মূলধন না থাকে তাহলে সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন


. ঔষধের দোকান :

বর্তমানে ফার্মেসি ব্যবসা একটি বেশ লাভজনক ব্যবসা অনেকে বলে এই ব্যবসায় ৫০% লাভ হয়ে থাকে যেহেতু গ্রাম অঞ্চলে লোক সংখ্যা বেশি কিন্তু সেই পরিমান ঔষধের দোকান নেই আপনি চাইলে সেইসব অঞ্চলে ফার্মাসি ব্যবসা করতে পারেন সাধারণত মাসের ফার্মেসি কোর্স করে ব্যবসা শুরু করা যায় ব্যবসা শুরু করার জন্য সরকারি স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেএেই কাস্টমারদের সাথে ভালো আচারন করে তাদের কে আকৃষ্ট করতে হবে 

 

. এজেন্ট ব্যাংকিং :

গ্রাম অঞ্চলের অনেক জায়গায় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা নেই আপনি চাইলে সেইসব অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করতে পারেন এজেন্ট ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা অর্থাৎ যেইসব অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা নেই সেইসব অঞ্চলে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা এর ফলে গ্রাহকের যত লেনেদেন হবে তার আপনি নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন লাভ করতে পারবেন এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান এবং কিছু সংখ্যাক লোক কিছু কম্পিউটার থাকা প্রয়োজন

 

. হস্ত শিল্পের ব্যবসা :

বহু আগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত হস্তশিল্পের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে অনেকেই এই ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে বেশ ভাল পরিমানে আয় করছে হস্তশিল্প আমাদের ঐতিহ্য আর এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকার বিভিন্ন উদ্দ্যেগ গ্রহন করেছে এছাড়াও আপনি যদি সুন্দর হস্তশিল্পের প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারেন তাহলে দেশে বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবেন বর্তমানে অনলাইনে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে আপনি চাইলে হস্তশিল্পের প্রোডাক্টগুলো অনলাইনেও বিক্রি করতে পারেন আপনি যদি হস্তশিল্পের কাজ না জানেন তাহলে গ্রামে অনেক হস্তশিল্পের কারিগর আছে তাদের কে নিয়োগ দিতে পারেন

 

. মুদি দোকান :

শহর থেকে গ্রাম সবজায়গায় মুদি ব্যবসা বেশ ভাল চলে মানুষের প্রতিদিনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য লাগে আর এসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মুদি দোকানে পাওয়া যায় অল্প পরিমান মূলধন দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করা যায় তবে এক্ষেএে মুদি পণ্য নির্বাচন করাটা জরুরি কারন চাহিদা কম এমন পণ্য দোকানে উঠালে ব্যবসার লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে শহরের তুলানায় যেহেতু গ্রাম অঞ্চলে খরচের পরিমান কম তাই সেখানে লাভের পরিমানও বেশি হয়ে থাকে ব্যবসায়িক আইডিয়ার মধ্যে মুদি ব্যবসা হতে পারে আপনার অন্যতম চয়েস সঠিক স্থান নির্বাচন করে ব্যবসা করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন

 

. ফ্লেক্সি লোডের দোকান :

বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাই সবজায়গাতেই ফ্লেক্সি লোডের চাহিদা রয়েছে এটি একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং এর মুলধনের পরিমানও কম যেহেতু বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটর সংখ্যা ৫টি তাই আপনি এর যেকোন একটি অপারেটর থেকে সিম নিয়ে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা শুরু করতে পারেন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই ব্যবসার সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসার পাশাপাশি আপনি ব্যাংকিং সার্ভিসও দিতে পারেন যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি

 

. গরু-ছাগল লালন-পালন :

গরুর মাংস বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার এবং এর চাহিদাও প্রচুর দিন দিন এর দাম ব্যাপক হাড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে গরু-ছাগল লালন-পালন একটি লাভজনক পেশা বছরে ২টি গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করলে বেশ ভালো লাভবান হওয়া যায় গ্রাম অঞ্চলে বেশিরভাগ বাড়ীতে গরু-ছাগলের খামার রয়েছে এবং তারা প্রতি বছরি কুরবানির ঈদে তা বিক্রি করে অনেক পরিবার সাবল্মবী হয়েছে আপনিও পারেন বেকারত্ব জীবন না কাটিয়া গবাদিপশু লালন-পালন করে উপার্জন করতে

 

১০. মাছের চাষ :

মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা এই ব্যবসা হতে পারে আপনার অন্যতম বিজনেস আইডিয়া গ্রামে অনেকেই নিজের পুকুরে অথবা পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে আপনি চাইলে দুইভাবে পুকুরে মাছ চাষ করতে পারেন যথা মাছের পোনা উৎপাদন বা মাছ উৎপাদন তবে মাছ চাষের জন্য অব্যশই প্রশিক্ষন নেওয়াটা জরুরি এতে মাছ পরিচর্যায় সতর্ক থাকা যায় এছাড়াও পুকুরের পাশে আপনি হাঁস চাষ করতে পারেন এর ফলে হাঁসের মল মাছের জন্য খাদ্যের যোগান দিবে এবং অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি করবে

 

আশাকরি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে আমাদের অন্যান্ন আর্টিকেলগুলো পড়ার আহ্বান রইলো

  

Post a Comment

0 Comments