শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় বাংলাদেশ ক্রম অগ্রসরমান। স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষার ক্রম উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং দেশের প্রতিটি শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের পাশাপাশি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামো
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট- ১. প্রাথমিক, ২. মাধ্যমিক এবং ৩. উচ্চ মাধ্যমিক। এই তিনটি প্রধান স্তর
বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়েছে।
১. প্রাথমিক শিক্ষা :
৫ বছর মেয়াদী। ১ম শ্রেণি-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। শিশু শ্রেণিকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা যায়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ৫ম শ্রেণি সমাপনী প্রাইমারি এডুকেশন কম্পিলশন (পিইসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী প্রাইমারি দাখিল সার্টিফিকেট (পিডিসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ইংলিশ মিডিয়ামে প্রাক প্রাথমিক স্কুলগুলোতে প্রাক প্রাথমিক শাখা খুলে আড়াই বছর বয়স থেকে সাত বছর বয়সের ছেলে মেয়েরা প্রি-প্লে, প্লে, নার্সারী, প্রি-কেজি ও কেজি শ্রেণিতে শিক্ষার ধাপ শুরু করে থাকে। এই ধাপসমুহের স্কুলগুলো নার্সারি স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন হিসাবে পরিচিত। ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়ামে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরকে পিএলএসসি বলে থাকে। PLSC বলতে গ্রেড ৫ ও গ্রেড ৮ এর পরীক্ষা পদ্ধতিকে বোঝানো হয়।
২. মাধ্যমিক স্তর :
৭ বছর
মেয়াদী। এর মধ্যে ৩বছর জুনিয়র বা নিম্ন মাধ্যমিক
৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি, ২ বছর মাধ্যমিক ৯ম ও ১০ম শ্রেণি এবং ২ বছর উচ্চ
মাধ্যমিক ১১শ ও ১২শ শ্রেণি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো
দশটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তিনটি পাবলিক পরীক্ষা- ৮ম শ্রেণিতে জুনিয়র
স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা, ১০ম শ্রেণিতে সেকেন্ডারি স্কুল
সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা এবং দ্বাদশ
শ্রেণিতে হায়ার স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির স্তরকে ইংরেজিতে ইন্টারমিডিয়েট
সংক্ষেকে ইন্টার বলা হয়ে থাকে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানগুলো কলেজ হিসেবে পরিচিত। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৮ম শ্রেণিতে জুনিয়র
দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা, ১০ম শ্রেণিতে দাখিল পরীক্ষা এবং
১২শ শ্রেণিতে আলিম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
৯ম ও ১০ম শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীদের ১. সাইন্স (বিজ্ঞান), কমার্স (বাণিজ্য) ও ৩. আর্টস (মানবিক) এ তিনটি বিভাগ থেকে যেকোনো একটি বিভাগ বেছে নিতে হয়।
ইংরেজি মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীরা এডেক্সেল বা ক্যাম্ব্রীজ কারিকুলামে পড়াশুনা করে। মাধ্যমিক স্তরকে ও লেভেল (O Level), উচ্চ মাধ্যমিক স্তরকে (A Level) বলা হয়ে থাকে, যা গ্রেড ৯ ও ১০ নিয়ে গঠিত হয়।
এছাড়া রয়েছে মাধ্যমিক পরবর্তী পর্যায়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালনার জন্য কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বৃত্তিমূলক শিক্ষা : বৃত্তিমূলক শিক্ষা হচ্ছে সরাসরি এবং বাস্তব প্রশিক্ষণের ওপর নিবদ্ধ শিক্ষার একটি অবকাঠামো। পেশাগত শিক্ষা ব্যবস্থাতে একাডেমিক শিক্ষার সাথে ইন্টার্নশিপ বা বাস্তবিক কাজে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন হয়। কৃষি, প্রকৌশল, ঔষধ, স্থাপত্য এবং কলা এর অন্তর্ভুক্ত।
৩. উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর :
৩-৫ বছর মেয়াদি। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্ত্বাবধানে অধিভুক্ত কলেজের মাধ্যমে এ উচ্চশিক্ষা পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা বা ইংরেজির মধ্যে যেকোনোটিকে বেছে নিতে পারে। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষেই শুরু হয় উচ্চতর শিক্ষার দৌড়ঝাপ। একাডেমিক উচ্চশিক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা ব্যক্তি সাধারণত সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, বা একাডেমিক ডিগ্রি বা উপাধি অর্জন করে থাকে।
৩.১.১ ডিগ্রি বা পাসকোর্স : ৩ বছর মেয়াদী। দ্বাদশ শ্রেণি শেষে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় ‘পাসকোর্স ডিগ্রি’। যেটা স্নাতক/graduate (পাস) বা শুধু
ডিগ্রি নামেই পরিচিত।
& এদের মধ্যে সাইন্সের শিক্ষার্থীদের জন্য-
B.Sc (Pass) : Bachelor
of science (বিজ্ঞানে স্নাতক বা
গ্রাজুয়েট)।
& কমার্সের জন্য- B.B.S (Pass) : Bachelor of Business
Studies (ব্যবসায় শিক্ষায় স্নাতক) বা b.com (Bachelor of Commerce)
& আর্টসের জন্য- B.S.S (Pass) :
Bachelor
of social science (সামাজিক বিজ্ঞানে স্নাতক) ও B.A (Pass) :
Bachelor
of Arts (মানবিকে
স্নাতক) প্রোগ্রামগুলো
রয়েছে।
& এছাড়াও বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম চালু রয়েছে- B Sports (Pass), B Music (Pass),
Home Economics (Pass).
৩.১.২
অনার্স (সম্মান) : মাধ্যমিক
শিক্ষা শেষে পাসকোর্স ডিগ্রি না করে যুগপোযোগী হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক অনার্স (সম্মান)
ডিগ্রি অর্জন করা। অনার্সে মোট চারটি শাখা চালু আছে।
1. B.SC (honours) : Bachelor
of science বিজ্ঞানে স্নাতক। বিষয়সমূহ : রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত,
পরিসংখ্যান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, প্রাণ রসায়ন, পরিবেশ বিজ্ঞান, ভূগোল ও
পরিবেশ, মনোবিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ।
৩.২ স্নাতকোত্তর (masters) : কোনো বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করাকে সে বিষয়ে মাস্টার্স
বলে। একাডেমিক সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বলা হয়।
ইন্টার লেভেলের পর পাসকোর্স, অনার্স বা অন্যান্ন ডিগ্রি অর্জন করে মাস্টার্সে পড়ার
মাধ্যমে সর্বোচ্চ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন হয় এবং অনার্সে সম্পন্ন করা সাবজেক্টেই
মাস্টার্সে করা হয়। যেমন- BA, BSc, Bcom, BBA, LLB, BDS, MBBS এগুলো
স্নাতক ডিগ্রি, আর M.A, M.Sc, Mcom, MBA, LLM, এগুলো স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স ডিগ্রি।
পাসকোর্স ডিগ্রীর পর মাস্টার্স করতে ২ বছর সময় লাগে। প্রথম পর্বকে মাস্টার্স প্রিলিমিনারি আর
দ্বিতীয় পর্বকে মাস্টার্স ফাইনাল বলে।
অনার্স কোর্স শেষ করে প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্সে ভর্তি হতে হয় না। অনার্স পাসকারীরা সরাসরি মাস্টার্স (১ বছরের কোর্সে) ভর্তি হতে পারে।
৩.৩ এছাড়াও যেসব স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে : ‘চারুকলায় স্নাতক’ (ব্যাচেলর অফ ফাইন আর্টস, বিএফএ)। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদী স্নাতক কোর্স শেষে অর্জিত হয় ‘প্রকৌশল বিজ্ঞানে স্নাতক’ (ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, বি.এসসি. ইঞ্জ)। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ল কলেজে ভর্তি হয়ে ২ বছর মেয়াদি LLB কোর্স করা যেতে পারে। এটিও একটি স্নাতক ডিগ্রি। LLB একটি ল্যাটিন শব্দ- Legum Baccalaureus (লেগাম ব্যাকালোরাস) থেকে এসেছে। ইংরেজিতে Bachelor of Laws (আইনে স্নাতক) বলা হয়। আইন পেশায় ক্যারিয়ার বানাতে চাইলে এলএলবি পড়ে LLM (masters of lows) পড়া যেতে পারে। মেডিকেল কলেজ থেকে ৫ বছরের স্নাতক শিক্ষাক্রম শেষে ‘চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শল্যচিকিৎসায় স্নাতক’ (এম.বি.বি.এস) উপাধি প্রদান করা হয়। এরকম আরো অনেক বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা যায়।
৩.৪ ডিগ্রী (পাস) প্রাইভেট : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষায়িত পাস (ব্যাচেলর) প্রোগ্রাম হলো ডিগ্রী (পাস) প্রাইভেট প্রোগ্রাম। এইচএসসির পর দীর্ঘদিন শিক্ষাবিরতির পর যারা পূনরায় ব্যাচলর লেবেলের পড়ালেখা শুরু করতে চায় এ কোর্স তাদের জন্য। জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজ গুলোতে এ কোর্স থাকে, মোট ৯১ টি কলেজে এ কোর্স রয়েছে।
৩.৫ প্রাইভেট সার্টিফিকেট কোর্স
: স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্স/ ডিগ্রী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা
যেসকল বিষয়ে ডিগ্রী/অনার্স পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে সেসব বিষয় ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু
বিষয় থেকে কোন একটি বিষয় নিয়ে সার্টিফিকেট কোর্সে রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবে।
সংক্ষিপ্ত পরিচয়
:
Faculty (অনুষদ) ও বিভাগসমূহ : একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে অধ্যয়নরতদের বিভাগ এবং পাশাপাশি কয়েকটি
বিভাগকে অনুষদ বলে বিশেষায়িত করা হয়।
পিএইচডি ডিগ্রি (Ph.D) : Doctor of Philosophy (ডক্তর অফ ফিলোসফি) একটি উচ্চ স্তরের ডিগ্রি। বিজ্ঞান ও কলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
0 Comments